সুলতানার রান্নাঘরের এপ্রিল ২০২৫ এর একটি সেলস চালান এর ছবি
যশোরের হোমমেড ফুড মার্কেটে টাব কেক হঠাৎ এতটা জনপ্রিয় হল কিভাবে !
শিহাব উদ্দীন
সফলতার গল্প বিভাগ।
২ মাস ২৩ দিন ৯ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে প্রকাশিত।
702 Views.
6 Comments. 211 Points.
যশোরে টাব কেক এর জনপ্রিয়তা এতটা বৃদ্ধি পাবার গল্পটা বেশি দিনের নয়। ২০২০ সালে সর্বপ্রথম সুমনা আপু ৫০০ এম এল এবং ১০০০ এম এল বাটিতে করে নতুন এক ধরণের কেক নিয়ে আসেন। দেখতে আজব এবং পেস্ট্রি কেক এর মতই মজাদার কেবলমাত্র উপরে ভারি ডেকোরেশন নেই সাথে ডেলিভারিতেও প্যারা কম কারণ পুরো কেক টাই মজবুত বাটিতে উপরে ঢাকনা সহ প্যাকেজিং করা। দাম টাও পেস্ট্রি কেক এর থেকে কিছুটা কম।
যেহেতু কেক টার ডেকোরেশন থাকে না তেমন আবার কোন দিবস পালনেও কাজে লাগে না, যাস্ট কেক লাভারদের জন্যই মূলত টার্গেটেড এই কেক টার প্রচলন মার্কেটে আনার প্লানিং ছিল। কিন্তু শখের বসে কেক খাবার মত রেগুলার কেক লাভার কাস্টমার তখন বেশ অভাব ছিল। যারাই কেক কিনতেন দিবস পালনকে টার্গেট করেই কিনতেন ৮০/৯০%। এসময় নাহিদ সুলতানা আপুর অরেঞ্জ কেক ও চকলেট কেক টা বেশ জনপ্রিয়তা পায় যেটা পাউন্ড কেক আকারে বিক্রি হত এখনও সেভাবেই হচ্ছে। এই টাব কেক টার চল তৎকালীন সময়ে তেমন না থাকায়, কাস্টমার রা এটা অর্ডার করতেন তাদের ও তেমন গ্রুপে রিভিউ না আসায় এবং দাম টা পেস্ট্রি কেক এর থেকে সামাণ্য কম থাকায় সব মিলিয়ে সেভাবে এর জনপ্রিয়তা তখন তৈরি হয়নি।
টাব কেকের থেকে তখন নাহিদ আপুর অরেঞ্জ পাউন্ড কেক টা বেশ ভাইরাল হয়। বেকিং সাইডে থাকা অন্য আপুরা মূলত কেবলমাত্র ডেকোরেশন কেক বিক্রয় এর উপরই ৯৯% নির্ভরশীল ছিলেন। নতুনত্ব বলে শুধু নতুন ডেকোরেশনকে বোঝানো হত। নতুন নতুন আইটেম আনা বা নতুন কিছু লঞ্চ করার প্রবণতা শূন্যের কোঠায় ছিল। এমনও কয়েকজন ছিলেন যাদের ভেতরে একটা কুসংস্কার ছিল যে একজন আপু যেটা করবেন অন্য আপুরা সেটা আর করতে পারবেন না বা করলে সেটাকে চোগলখোরি প্রক্রিয়ায় নকলবাজ আখ্যা দিয়ে দেয়ার আশংকা ছিল। কেউ কেক রিজনেবল প্রাইসে দিলেই সে বাজে উপকরণ ব্যবহার করে কেক বানায় এরকম একটা অপবাদ ছড়িয়ে দেয়া হত কাস্টমারদের মাঝে। এসময় আমরা বেশ কয়েকজন নতুন উদ্যোক্তা হারাই যারা ৩৫০ টাকা পাউন্ড ডেকোরেশন কেক স্বল্প লাভে মার্কেটে আনেন এই কালো চক্রান্তের যুগে। এ্যাডমিন প্যানেল থেকেও এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয়াটা দুরূহ বা একসময় প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই ত্রাশের রাজত্ব অবশ্য আরো কয়েক বছর স্থায়ী হয় কারণ অনেক সিনিয়র আপুরাও অপছন্দ করতেন, তিনি যেটা মার্কেটে লঞ্চ করবেন সেটা অন্য কেউ আনতে পারবে না। এই কৃসংস্কার ধীরে ধীরে আমাদের অনেক বড় পিছুটান হয়ে দাড়ায় এবং একটা মনোপলি মার্কেটে পরিণত হবার অবস্থা তৈরি হয় ফুডিস ক্লাব তথা আগামীর উদ্যোক্তা। আমরা বহু চেষ্টা করে যদিও অনেক দেরিতে হলেও তাদের ধরতে এবং ফুডিস ক্লাব তথা আগামীর উদ্যোক্তা থেকে সমূলে নির্মূল করতে সক্ষম হই।
২০২২ সালের শেষ দিকে হঠাত একজন নতুন উদ্যোক্তা আপু যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন ঢাকাতেই হোমমেড কেক এর বিজনেস শুরু করেন। যশোরে এসে যে কদিন থাকতেন তার ছোট বোন এর সহায়তায় তিনি যশোরেও বিজনেসটা বড় করতে চেষ্টা করেন। তিনি হঠাত সেই জার কেক টা মার্কেটে লঞ্চ করেন এবং এবারের তার চমক ছিল অত্যন্ত রিজনেবল প্রাইস। ২০০ টাকা বা ১০০ টাকা এক বাটি সাথে আবার ২ টা নিলে ১ টা ফ্রি এমন আকর্ষণীয় অফার দিয়ে রাতারাতি টাব কেক এর মার্কেট শেয়ার ৯০% নিয়ে নেন বেজপাড়ার উদ্যোক্তা ফারিয়া ইসলাম পুষ্পিতা আপু। হঠাত এই আইডিয়াটা এবং এক দিকে হাতের নাগালে দাম অন্যদিকে পারফেক্ট টেস্ট বাচ্চা থেকে শুরু করে সব বয়সী কেক লাভারদের জন্য তখন ছিল সোনায় সোহাগা। রাতারাতি ভাইরাল হওয়া এই কেক তখন দিনে ৫০ থেকে ৮০ টি পর্যন্ত বাটি বিক্রি ও ডেলিভারি হত। এক টানে ফারিয়া আপু উঠে আসেন যশোরের হোম কিচেনের লাইম লাইটে।
যেহেতু ততদিনে ত্রাশের রাজত্ব প্রায় শেষের দিকে, এডমিন প্যানেল থেকে নিয়ন্ত্রণ বেশ শক্ত। অবশেষে ফারিয়া আপুর এই টাব কেকের তুমুল ঝড়, কাস্টমার রিভিউ দেখে কয়েকজন সাহস করলেন এটা নিয়ে কাজ করার। ফারিয়া আপুদের এই সফলতাই মূলত তখন যশোরে অন্যান্য প্লাটফর্মের উদ্যোক্তাদের মাঝেও টাব কেক বিজনেসের বীজ বপন করে।
এভাবেই চলতে থাকে টাব কেক এর সফলতার ইতিহাস। যশোরে হোমমেড টাব কেক এর সেলস ফুডিস ক্লাব তথা আগামীর উদ্যোক্তায় যে পরিমাণ সেটা বিট করার মত কোন প্লাটফর্ম এখনও তৈরি হয়নি কারণ টাব কেক এর শেকড় থেকে শিখরে পুরো গল্পটার পটভূমিই এই ফুডিস ক্লাব যশোর গ্রুপ। রিজনেবল প্রাইস এবং টেস্ট এই ২ টি ফ্যাক্টর টাব কেক কে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসে। ফারিয়া আপুর পর সর্বোচ্চ টাব কেক বিক্রয় এর রেকর্ড করেন সুলতানার রান্নাঘর এর সুলতানা খাতুন পলি আপু। তাহসিনা তাহিন আপুর কম্বো প্যাকেজে টাব কেক টাও ব্যপক জনপ্রিয়। এছাড়াও কম বেশি প্রায় প্রতিটি কিচেনে এখন টাব কেক টুক টাক দেখা যায়। টাব কেক বর্তমানে একটি রেগুলার জনপ্রিয় আইটেম হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২৩ সালের মাঝের দিক থেকে প্লাটফর্মে টাব কেক কত পিস সেল হচ্ছে সেটারও হিসাব রাখার শুরু হয়। এই দীর্ঘ জার্নিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই শুভকামনা। ধন্যবাদ সকলকে।।
Direct Share Link :
বার বার মোবাইল নম্বর লিখে কমেন্ট করার ঝামেলা এড়াতে ও অনেক সুবিধাদি পেতে আপনার কাস্টমার মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রথমে লগইন করে নিন। Login Now
VIP Nurul Amin
খাবারটায় নতুনত্ব আছে, আর খেতেও বেশ ভালো।
39 Points.
10 Comments.
12 April 2025.
11:14 PM.
শিহাব উদ্দীন
জি। কেক লাভারদের জন্য দারুণ উপহার। ❤️
Admin.
1,422 Replies.
13 Apr, 2025.
01:14 AM.
S.R SHUVO VIP
আলহামদুলিল্লাহ আমাদের অর্থাৎ সুলতানার রান্নাঘরের এটা এতটাই জনপ্রিয় হাজার বক্স + ইতিমধ্যে ডেলিভারি হয়ে গিয়েছে। যশোরের প্রফেশনাল বেকিং ইন্ড্রাস্ট্রি তে রিজেনেবল প্রাইসের কেকে গুলোর সফলতা চোখে ধরার মতো
171 Points.
35 Comments.
12 April 2025.
09:06 PM.
শিহাব উদ্দীন
দিবস পালনের জন্য কেক এই ছোট মন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে মার্কেটটা আজ এত বড় হয়েছে কয়েকজন উদ্যোক্তার সাহসিক সিদ্ধান্তের জন্য। ধন্যবাদ অনেক অনেক।
Admin.
1,422 Replies.
13 Apr, 2025.
01:19 AM.
FARIHA ISLAM PUSPITA
টাব কেক বিক্রি দিয়েই আমাদের বিজনেসের হাতেখড়ি।শুরুতে এমন হয়েছিল ডেলিভারি করে পারা যেত না।এমনকি একদিন একজন পাইলট ও অর্ডার করেছিলেন এটা এতো জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল।আজও এর জনপ্রিয়তা বহাল আছে।টাব কেকের যত ধরনের ফ্লেভার ভ্যারাইটি বা কম্বো ভ্যারাইটি সবই আমাদের কাছে এভেইলএবল আছে।মজার বিষয় আমাদের দূর্বলতা থেকেই টাব কেক টা করা শুরু হয়,আমার ছোট বোন শুরুর দিকে ততটা ডেকোরেশনে পারদর্শী ছিল না, এজন্যই এই আইডিয়া বের করা।তবে সেই দূর্বলতাই এভাবে সাফল্য চলে আসবে কল্পনা করিনি। পরিশেষে আগামীর উদ্যোক্তা প্ল্যাটফরম ছাড়া এ মেধা বিকাশের সুযোগ ছিল না।তাই বিশেষ কৃতজ্ঞতা।।
1 Points.
7 Comments.
12 April 2025.
12:56 PM.
শিহাব উদ্দীন
আলহামদুলিল্লাহ আপু। টাব কেকের এই সুন্দর স্টোরি টা হ্যাপি এন্ডিং হত না যদি হয়তো বা আপনাদের এই দুর্বলতাটা না থাকতো। দাগ থেকেই দারুণ কিছু তেমনই একটা সফলতার গল্প এটি। সবসময় শুভকামনা ❤️
Admin.
1,422 Replies.
12 Apr, 2025.
01:37 PM.